মকতুবাত শরীফ
৫২ নাম্বার মকতুব : সহজ ভাষায় ৫২ নাম্বার মাকতুব সহজ ভাষায় অনুবাদ এটিও শায়েখ ফরিদের রহঃ এর কাছে লিখা হয়েছে। এতে নফছে আম্মারা ও তার স্বভাবজনিত ব্যাধি এবং সেই ব্যাধির চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।মুজাদ্দিদ আলফেসানী রহমাতুল্লহি আলাইহি লিখছেন: __মুখলিছ (একনিষ্ঠ) ও দোয়া চাওয়ার নামে আপনি যে অনুগ্রহপত্র পাঠিয়েছিলেন, তা পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আপনাকে হযরত নবী করীম ﷺ —এর উসিলায় আল্লাহ্ পাক যেন আপনাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন, সম্মান বৃদ্ধি করেন, আপনার অন্তর উন্মুক্ত করেন এবং সকল কাজ-কর্ম সহজ করে দেন (এই দোয়া করি)। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে নবী করীম ﷺ–এর পথ অনুসরণে দৃঢ় রাখুন। যারা আমার এই দোয়ার প্রতি আমীন বলবে, আল্লাহ্ পাক তাঁদের উপরও অনুগ্রহ বর্ষণ করুন। আমীন!এরপর কিছু বিপদজনক/কলুষিত/অনিষ্ট স্বভাবের দুশ্চরিত্র সঙ্গীর দোষ বর্ণনা করছি। মনোযোগ দিয়ে শুনুন! হে সম্মানিত ভাই, জেনে রাখুন—নফছে আম্মারা (নফস বা স্বভাবগত খারাপ প্রবৃত্তি) সাধারণত সম্মান ও কর্তৃত্ব কামনা করে, এবং সবসময় সে চায়, তার সঙ্গীদের চেয়ে উচ্চ মর্যাদায় থাকে। সে চায় যেন সমস্ত সৃষ্টি তার অধীন হয়, যেন কেউই তার শাসনের বাইরে না থাকে। এই মনোভাব আসলে খোদায়ী দাবির সমান— আল্লাহ্ তায়ালার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা, বরং এভাবে মনে হয় যেন সে আল্লাহ্র উপরেও কর্তৃত্ব করতে চায়— যেন সবাই তার কথা মেনে চলে।হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন:“তোমার নফসের সঙ্গে শত্রুতা করো, কারণ সে আমার সাথেও শত্রুতা করতে প্রস্তুত।”তাই যদি কেউ নফছে আম্মারার সম্মান, ক্ষমতা বা অহংকার পূরণের চেষ্টা করে এবং তাকে সাহায্য করে, তবে সে আল্লাহ্র শত্রুর সহায়তা করছে। এটি কত বড় ভুল কাজ, তা চিন্তা করা উচিত।আরেক হাদিসে কুদসিতে আছে:আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন,الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ، وَلَا أُبَالِي— رواه مسلم“অহংকার আমার চাদর, উচ্চতা আমার লুঙ্গি। কেউ যদি এগুলোর কোনও একটি নিয়ে আমার সঙ্গে বিবাদ করে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আমি কাউকে পরোয়া করি না।” (সহিহ মুসলিম) এই দুনিয়ার তুচ্ছ সম্পদ অর্জনের পেছনে ছুটে চলা নফসের কামনা পূরণের মাধ্যম— তাই দুনিয়া আল্লাহ্র গজবের বস্তু এবং অভিশপ্ত। যে ব্যক্তি আল্লাহ্র শত্রুর সাহায্য করে, সে অভিশাপের যোগ্য। এজন্যই গরিবি হালত বা দরিদ্রতা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে “গৌরবের বিষয়” হয়েছে— কারণ গরিব থাকলে নফসের খারাপ/কুরুচি/কুচিন্তা কামনা পূরণ হয় না, বরং সে দুর্বল হয়ে থাকে।তাই আল্লাহ্ পাক তাই নবীদের পাঠিয়েছেন নফছে আম্মারাকে দুর্বল ও ধ্বংস করার জন্য এবং শরীয়তের হুকুম চালুর মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য। শরীয়তের যতটুকু পালন হবে, ততটুকু নফসের কামনা/বাসনা/চাহিদা দুর্বল হবে। এই জন্যই দীর্ঘ বছর সন্ন্যাস পালন বা কঠোর সাধনার চেয়ে শরীয়তের একটি হুকুম পালন করাই উত্তম। কারণ, শরীয়তের বাইরে সাধনা করলে নফস আরও শক্তিশালী হয়। যেমন— ব্রাহ্মণ বা যোগীরা কঠোর সাধনা করে, কিন্তু সেই সাধনার মাধ্যমে নফস আরও জোরদার হয়ে ওঠে। ( অর্থাৎ,যত বেশি একজন মানুষ শরীয়তের (ইসলামি আইন ও বিধানের) অনুসরণ করবে, তত বেশি তার নফসের (আত্মার পশুবৃত্তি/লোভ/অহংকার ইত্যাদি খারাপ প্রবৃত্তি) খারাপ চাহিদাগুলো দূর হবে।🔹 অনেকে ভাবেন – কঠোর সাধনা, দীর্ঘ সময় সন্ন্যাস বা ত্যাগের জীবনই আত্মশুদ্ধির মূল পথ।❗কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে যদি সেই সাধনা শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী না হয়, তাহলে তা উল্টো নফসকে আরও অহংকারী ও শক্তিশালী করে তোলে।➡️ যেমন, ব্রাহ্মণ বা যোগীরা বহু ত্যাগ ও ব্রত পালন করেন, কিন্তু যেহেতু তা শরীয়ত অনুযায়ী নয়, তাই তা নফসকে দুর্বল না করে বরং তাকে আরও আত্মতুষ্ট ও অহংকারী করে তোলে) যেমন— নফসকে শুদ্ধ করার লক্ষ্যে, যদি কেউ শরীয়তের আদেশ/নির্দেশ মেনে জাকাতের নিয়তে একটি দান (এক তোলা বা সামান্য) কিছু ব্যয় করে, তবে তা হাজার মুদ্রা (টাকা) ইচ্ছায় দান করার চেয়েও উত্তম ও ফলদায়ক।একইভাবে, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ঈদের দিন খাওয়া-দাওয়া করা পুরো বছরের নফল রোযা রাখার চেয়েও শ্রেষ্ঠ।আবার, কেউ যদি সারা রাত জেগে নফল নামাজে মশগুল থাকলো, কিন্তু ফজরের জামাতে শরিক না হলো না; তাহলে তার রাত্রিজাগরণের চেয়ে সুন্নাহ মোতাবেক ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তম। মূলকথা, যতদিন না নফস (আত্মার পশুবৃত্তি ও খারাপ চাহিদা) পরিশুদ্ধ হয় এবং নেতৃত্ব, বড়ত্ব, অহংকারের নেশা থেকে মুক্ত হয়; ততদিন তার পক্ষে প্রকৃত মুক্তি লাভ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।অতএব, এই নফসের রোগ ও ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাতে তা মানুষকে চিরস্থায়ী ধ্বংস অর্থাৎ মৃত্যুর পর আখিরাতের শাস্তির দিকে না নিয়ে যায়। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”—এই পবিত্র কলেমা মূলত সৃষ্টি হয়েছে সমস্ত বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ ভুল উপাসনার প্রতিরোধ এবং শুধুমাত্র আল্লাহর একত্বের বাণী প্রতিষ্ঠার জন্য।এই কলেমা এতটাই কার্যকর ও শক্তিশালী, যে তাসাউফ ও তরীকার বুযুর্গ/শায়েখগণ এটিকে নফস শুদ্ধ করার প্রধান পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। “না করলে ‘লা’ দ্বারা পথ পরিষ্কার,হবে না কো – ‘ইল্লাল্লহ’র গৃহে উপনীত।” (অর্থাৎ, যদি ‘লা’ দ্বারা ভুল আকাঙ্ক্ষা ও অপবিত্রতা দূর না করা হয়, তবে ‘ইল্লাল্লাহ’ তথা আল্লাহর ঘরে বা সান্নিধ্যে পৌঁছানো যাবে না) যখনই নফস ছারকাশী (দুষ্টুমি) / অহংকার করে বা আল্লাহর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে, তখনই এই কালিমা দ্বারা নতুন করে ঈমান আনতে হয়। এজন্যই নবী করীম (সা.) বলেছেন—“তোমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর মাধ্যমে নিজেদের ঈমান নবায়ন করো।”বরং এই কালিমা সবসময় জপতে থাকাই উচিত/যিকির করা উচিত, কারণ নফস সর্বদা অপবিত্রতার দিকে ঝুঁকে থাকে।হাদীস শরীফে এসেছে:لَوْ وُضِعَتِ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرضُونَ السَّبْعُ فِي كِفَّةٍ، وَوُضِعَ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فِي كِفَّةٍ، لَرَجَحَتْ بِهِنَّ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ— رواه ابن حبان، والحاكم، والطبراني وغيرهمরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:“যদি সাত আসমান ও সাত জমিন এক পাল্লায় রাখা হয়, আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমা অপর পাল্লায় রাখা হয়, তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর পাল্লাটিই ভারী হবে।”(১) যারা সঠিক/হেদায়েতের পথ অনুসরণ করেন এবং নবী করীম (সা.)-এর আদর্শে চলেন, তাঁদের প্রতি সালাম রইলো। (চিঠিটি এখানেই শেষ) (১) হাদীসের গ্রহণযোগ্য সূত্রসমূহ:📚 মুস্তাদরাক হাকিম – (হাদীস: 1937)– ইমাম হাকিম (রহ.) বলেছেন: “এই হাদীসটি সহীহুস সানাদ।” 📚 ইবনে হিব্বান – (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস: 812) 📚 আল-মুজাম আল-কবীর – (ইমাম ত্বাবারানী, হাদীস: 16001) 📚 ইমাম যাহাবী ও অন্যান্য হাদীস বিশারদগণ এটিকে হাসান বা সহীহ বলেছেন। 📘 ৫২তম মকতুবের আলোকে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর: ১. মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.) এই চিঠিটি কার উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন? উত্তর:এই চিঠিটি হযরত শায়েখ ফরিদ (রহ.)-এর উদ্দেশ্যে লেখা হয়। তিনি ছিলেন ইলম ও তাসাউফের পথে একজন মনোযোগী মুরীদ। চিঠির শুরুতেই তাঁকে দোয়া ও ভালোবাসা জানিয়ে মূল বিষয় উপস্থাপন শুরু করেন। ২. ‘নফসে আম্মারা’ বলতে কী বোঝায়? উত্তর:‘নফসে আম্মারা’ হলো মানুষের সেই পশুবৃত্তিপূর্ণ প্রবৃত্তি, যা সবসময় মন্দ কাজের আদেশ দেয় এবং আল্লাহর নির্দেশনার বিপরীত পথে চলতে চায়। এটি অহংকার, নেতৃত্ব কামনা, আত্মম্ভরিতা ও দুনিয়ামুখী চাহিদা দ্বারা চালিত। ৩. নফসের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভ্যাস কোনটি? উত্তর:নফস সবসময় অন্যদের চেয়ে নিজেকে বড় ভাবতে চায়, নেতৃত্ব ও সম্মান পেতে চায় এবং মনে করে
নামাজ, সাহরি ও ইফতারের স্থায়ী ক্যালেন্ডার/সময়সূচি
(বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের নির্ধারিত সময়সূচির অনুসরণে) আলোকিত এই নামাজ, নামাজ, সাহরি ও ইফতারের স্থায়ী সময়সূচি মরহুম হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতি (রহঃ) কর্তৃক রচিত ও সংকলিত, যিনি ছিলেন একজন বিদ্বান আলেম, ফিকহ ও ইবাদতের বিষয়ে বিশদ জ্ঞানসম্পন্ন একজন নির্ভরযোগ্য ইসলামী চিন্তাবিদ। ✅ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: সূর্যোদয়ের পর কত মিনিট পরে নামায পড়া যাবে? ১১-১৫ মিনিট পর পড়লে কি জায়েয হবে? 🟨 সারসংক্ষেপে উত্তর: ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে ১৫ মিনিট পর নামায পড়া “জায়েয” (যথার্থ), তবে সতর্কতা ও নিরাপত্তার জন্য ২০–২৫ মিনিট অপেক্ষা করাই উত্তম ও অধিক নিরাপদ। 📚 তথ্যসূত্র ও বিশ্লেষণ: ১. নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে হাদীস: নবী করীম ﷺ বলেন: 📖 عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: ثَلاَثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا: حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً، وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ، وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ. 📘 বাংলা অনুবাদ: উকবা ইবন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:“তিনটি সময় ছিল যখন আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাদের নামায আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদের কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেন—১. যখন সূর্য উদিত হয়ে ওঠে (অর্থাৎ সূর্য উঠার সময়),২. যখন সূর্য মধ্য আকাশে থাকে (মধ্যাহ্ন),৩. যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে হেলে পড়ে (সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত)।” 📚 উৎস: 📖 সহিহ মুসলিম,হাদীস নম্বর: 831,বই: কিতাবুস সালাত (নামায সংক্রান্ত অধ্যায়) এই “উঠার সময়” বলতে বোঝায়, সূর্য দিগন্ত থেকে পুরোপুরি উঠার পর যতক্ষণ না তা দৃষ্টিগোচরভাবে উপরের দিকে ওঠে, সেই সময় পর্যন্ত। উলামায়ে কেরামের ব্যাখ্যা: বিভিন্ন ফিকহি কিতাব ও আলেমগণের ব্যাখ্যায় সূর্যোদয়ের পর নিষিদ্ধ সময়ের পরিমাণ হিসেবে তিনটি মত দেখা যায়: মতামত সময় উৎস ন্যূনতম ১১–১৫ মিনিট কিছু ফিকহি উৎসে (যেমন: হেদায়া, ফাতাওয়া) সাধারণ মত অনুযায়ী: ২০ মিনিট (অধিকাংশ আলেমের মতে) সর্বোত্তম নিরাপত্তা সময়: ২৩-২৫ মিনিট।ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সৌদী আরবের মান, ভারতীয় মুফতিগণ 🧭 গবেষণা অনুযায়ী: ✔ ১১–১৫ মিনিট পর নামায পড়লে অনেক আলেমের মতে তা “জায়েয”, কিন্তু এটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। ✔ তাই, যেহেতু নামায একটি ফরজ ইবাদত এবং এর সময় নিয়ে শিথিলতা উচিত নয়। তাই এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ মিনিট অপেক্ষা করাই উত্তম। 🔔 কেন সতর্কতা দরকার? জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের সময় অল্প কিছু মিনিটেও অনেক পরিবর্তন ঘটে। সব অঞ্চলে সূর্যের গতি একরকম নয়। ইসলামী ফাউন্ডেশন সময়সূচীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ কথা ১১–১৫ মিনিট পর নামায পড়লে তা সহীহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে ২০–২৫ মিনিট অপেক্ষা করাই অধিক নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং উত্তম। 🕌 নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা কেন জরুরি? 📖 ১. কুরআনের স্পষ্ট আদেশ: إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا অনুবাদ:নিশ্চয়ই নামায মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ফরজ করা হয়েছে। 📚 সূরা আন-নিসা (4:103) 🔹 এই আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়—নামায কেবল পড়লেই হবে না, বরং নির্ধারিত সময়ে পড়তে হবে। সময়ের বাইরে নামায পড়া হলে তা গুনাহের কারণ হতে পারে এবং ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। 📘 ২. হাদীসের নির্দেশনা: 📌 হাদীস-১: سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ: أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا অনুবাদ:আমি আল্লাহর রাসূল ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলাম, “সর্বোত্তম কাজ কোনটি?”তিনি বললেন, “নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করা।” 📚 সহিহ বুখারী ও মুসলিম 📌 হাদীস-২: مَنْ حَافَظَ عَلَى الصَّلَوَاتِ كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ অনুবাদ:যে ব্যক্তি নামাযের হেফাজত করে (অর্থাৎ সময়মতো পড়ে), তা কিয়ামতের দিন তার জন্য হবে নূর, প্রমাণ এবং মুক্তির উপায়। 📚 মুসনাদে আহমদ ⏰ সময়ের গুরুত্ব: নামাযের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। এতে রয়েছে— ✅ নির্ধারিত সময়ে নামায আদায়ের উপকারিতা: বিষয় ও ব্যাখ্যা 🕋 আল্লাহর সন্তুষ্টি সময়মতো নামায আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা🌟 ফজিলত ও সাওয়াব সময়মতো পড়লে নামাযের পূর্ণ ফজিলত লাভ হয়🧭 সময় সচেতনতা জীবন হয় সুশৃঙ্খল ও লক্ষ্যভিত্তিক🛡️ গুনাহ থেকে বাঁচা দেরি করে পড়লে কাযা হয়, যা গুনাহের কাজ🧘 আত্মিক প্রশান্তি নামায সময়মতো পড়লে হৃদয় শান্ত হয় ⚠️ দেরিতে নামায পড়ার ক্ষতি: কাযা হলে গুনাহ হবে সময়চ্যুত ইবাদতের ফজিলত পাওয়া যাবে না গাফলতি ও অলসতার অভ্যাস গড়ে উঠে কিয়ামতের দিন জবাবদিহির ভয় 🔹 নামায আল্লাহর ফরজ করা সবচেয়ে বড় ইবাদত। তাই শুধু পড়লেই হবে না, সময়মতো পড়া অপরিহার্য।🔹 আল্লাহর নিকট নামায সময়মতো আদায়কারীই প্রিয়।🔹 কুরআন ও হাদীস বারবার সময়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।🔹 নামাযের প্রতি যত্নশীল হলে জীবনের সকল কাজেই বরকত ও সফলতা আসে। 🕌 নিয়মিত যথাসময়ে নামাজ পড়ার ফজিলত (হাদীসভিত্তিক) 🌿 তাযকিয়াতুন নফস গঠনে নামাযের গুরুত্ব — হাদীস ও কুরআনের আলোকে :
মকতুবাত শরীফ
৫১ নম্বর মকতুব : 🔹 সহজ ভাষায় ৫১ নম্বর মাকতুব এই চিঠিটিতে শায়েখ ফরিদ (রহ.)-কে ইসলামি শরীয়তের দাওয়াত প্রচার-প্রচারে উৎসাহিত করার বিষয়ে বলা হয়েছে। (শেখ ফরিদ হচ্ছেন মুজাদ্দেদে আলফেসানী রহঃ’র একজন উঁচু পর্যায়ের মুরিদ/ছালেক। এই চিঠিতে শায়েখ তাঁর ছাত্র/ছালেককে উপদেশ দিচ্ছেন এবং বলছেন) আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আপনি, যিনি একজন বড় ব্যক্তির যোগ্য সন্তান, তাঁর মাধ্যমে ইসলামের আলো, শরীয়তের বিধি-বিধান ও ইসলামের মূল নীতিগুলো প্রতিষ্ঠিত ও প্রচলিত হয়। আসল কাজ এটিই (অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াতি কাজ করা/তাযকিয়াতুন নফসের দিকে ডাকা)—এই কাজ ছাড়া অন্য সব কিছুই মূল্যহীন। ইদানীং/বর্তমানে যেভাবে পথভ্রষ্টতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে বাঁচার একমাত্র ভরসা হল নবীজির (সঃ) আহলে বাইতের নৌকা/তরণী (তাঁর বংশধর)। ঠিক যেন কেউ পানিতে পড়ে গেলে নৌকার সাহায্যে রক্ষা পাওয়া যায়, তা ঠিক তেমনি। নবীজী (সঃ) বলেছেন, “আমার আহলে বাইত (পরিবারের সদস্যরা) নূহ (আঃ)-এর নৌকার মতো। যারা এতে উঠবে (অর্থাৎ অনুসরণ করবে), তারা নাজাত পাবে। আর যারা দূরে থাকবে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।” আপনার উঁচু মন-মানসিকতা যেন এই সৌভাগ্য অর্জনের দিকেই মনোযোগ দেয়—যাতে আপনি এই আহলে বাইতের সঙ্গ লাভ করে সত্য পথের অনুসারী হতে পারেন। আল্লাহর দয়ায় আপনার মধ্যে সম্মান, পুণ্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও সামাজিক মর্যাদা—সবই আছে। এর সঙ্গে যদি আপনি ইসলাম প্রচারের কাজও করেন, তাহলে আপনি সকলের মধ্যে অগ্রগামী বা নেতৃস্থানীয় হয়ে উঠবেন। এই দরবেশ (চিঠির লেখক/মোজাদ্দেদ আলফেসানী) শুধু ইসলামের সত্য পথ প্রচারের উদ্দেশ্যেই এসব আলোচনা করে আপনাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। দিল্লিতে রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। মা সাহেবা একটু দেরি করতে চেয়েছেন, তাই আমরা কোরআন শরীফের শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত ও শ্রবণের জন্য অপেক্ষা করেছি। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। আপনার জন্য দুনিয়া ও আখিরাত—উভয়ের কল্যাণ কামনা করি। (চিঠি এখানে শেষ) — সহজ ভাষায় অনুবাদ, নকশবন্দি সুফি সেন্টার, জামতলা, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ। +88 01841674774 শায়েখ ফারিদ ছিলেন মুজাদ্দেদে আলফে ছানী (রহ.)-এর একজন অত্যন্ত প্রিয়, নিষ্ঠাবান, ও আধ্যাত্মিক অগ্রগামী শিষ্য (مريد صادق)। তিনি শুধু একজন সাধারণ মুরীদ ছিলেন না, বরং এমন একজন শিষ্য ছিলেন যিনি আত্মশুদ্ধি ও রুহানিয়াতের পথে গভীরভাবে অগ্রসর ছিলেন। 🔹 শায়েখ ফরিদের বৈশিষ্ট্য ও অবস্থান: আত্মশুদ্ধির আগ্রহী সাধক তিনি নিজের নফস ও হৃদয়ের পরিশুদ্ধি চাচ্ছিলেন। মুজাদ্দেদে আলফে সানী (রহ.) তাঁর অনেক চিঠিতে তাঁকে আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন, যা বোঝায় যে তিনি সেই পথে ছিলেন। উচ্চ রুহানিয়াতের যোগ্য ছিলেন তাঁর রুহানিয়াত এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে, মুজাদ্দেদে আলফে সানী (রহ.) তাঁকে হাল বা কাশফের বিষয় বোঝাতেন—যা সাধারণ মুরীদদের ক্ষেত্রে করা হয় না। সত্যনিষ্ঠ ও অনুসরণকারী শিষ্য তিনি তাঁর মুরশিদের কথা মেনে চলতেন, তাঁর কাছ থেকে আত্মিক ও ইলমি ফায়দা গ্রহণ করতেন। তাঁর প্রতি চিঠির ভাষা থেকে বোঝা যায়, তিনি পরিশ্রমী, বিনয়ী এবং অনুসারী ছিলেন। পরামর্শপ্রার্থী ও প্রশ্নকারী বিভিন্ন রুহানী অবস্থা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি তাঁর শায়েখের কাছে প্রশ্ন করতেন, আর মুজাদ্দেদে আলফে সানী (রহ.) খুব যত্নসহকারে উত্তর দিতেন। এটা দেখায় যে তিনি একজন সচেতন ও চিন্তাশীল মুরীদ ছিলেন। 🌿 সংক্ষেপে: ✅ শায়েখ ফারিদ ছিলেন একজন– আন্তরিক,– অনুগত,– আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে সক্রিয় শিষ্য।✅ তিনি মুজাদ্দেদে আলফে সানী (রহ.)-এর বিশ্বস্ত এবং প্রিয় মুরীদদের একজন ছিলেন।✅ তাঁর রুহানিয়াতের এমন স্তর ছিল যে, তাঁর সাথে কাশফ, ফানা-বাকা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হতো।