arnoor

হজ ও কেবলার তাৎপর্য: কুরআন-হাদিসের আলোকে ১০টি বিস্ময়কর তথ্য, এ কী তথ্য!

১. কুরআনের আয়াতসমূহ:হজ ফরজ হওয়ার ঘোষণা:“এবং মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উষ্ট্রের উপর চড়ে, যা আসে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।” — সূরা হজ্জ, আয়াত ২৭কেবলা সম্পর্কে নির্দেশনা:“তোমরা যেদিক থেকেই আসো, সেই দিক থেকেই মুখ ফিরিয়ে মসজিদুল হারামের দিকে ফিরো।” — সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪৯ কা’বা আল্লাহর ঘর:“নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষদের জন্য নির্মিত হয়েছে, তা হচ্ছে বক্কায় (মক্কায়) যা বরকতময় এবং বিশ্বের জন্য পথনির্দেশ।” — সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬ ২. হাদীসসমূহ:হজ ইসলামের স্তম্ভ:“ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত—… হজ পালন করা এবং কা’বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা।” — সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮হজের ফজিলত:“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে, সে গুনাহমুক্ত হয়ে ফিরে আসে যেন নবজাত শিশুর মতো।” — সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫২১ ৩. হজ ও কেবলার গুরুত্ব:কা’বা মুসলমানদের কেবলা—নামাজ, হজ, ও কুরবানি এই কেন্দ্র ঘিরেই আবর্তিত।হজ মুসলমানদের একতা, ভ্রাতৃত্ব ও তাওহিদের প্রকাশ—সব জাতি, বর্ণ এক জামাতের অংশ।হজে গিয়ে কেবলার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজের গুনাহর ক্ষমা চায়, আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করে।৪. গুরুত্বপূর্ণ উপসংহার:হজ ও কেবলা মুসলমানের জীবনে শুধু এক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা হলো ঈমান, তাওহিদ ও ইসলামী ঐক্যের প্রতীক। হজের মাধ্যমে মানুষ আত্মিক প্রশান্তি, গুনাহমুক্ত জীবন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। হজের আহকামসমূহ পরিভাষা ও গুরুত্ব: হজ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা, উদ্দেশ্য করা। পরিভাষায় হজ হলো:“নির্ধারিত সময়ে, নির্ধারিত স্থানে গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত সম্পাদন করা।” হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। প্রত্যেক সক্ষম মুসলমান নর-নারীর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরয। আল কুরআনে ইরশাদ: “মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর জন্য কাবাঘরের হজ করা ফরজ।”[সূরা আলে ইমরান: ৯৭] হজের শর্তসমূহ (যার মাধ্যমে হজ ফরয হয়): ১. মুসলিম হওয়া২. প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হওয়া৩. বিবেকবান হওয়া৪. স্বাধীন হওয়া৫. হজের খরচ বহন করার সামর্থ্য থাকা৬. পথ নিরাপদ হওয়া৭. নারীদের জন্য মাহরাম থাকা হজের প্রকারভেদ: ১. হজে ইফরাদ – শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে হজ করা।২. হজে কিরান – উমরাহ ও হজ এক ইহরামে পালন করা।৩. হজে তামাত্তু – উমরাহ করে ইহরাম খুলে হজের সময় আবার নতুন ইহরামে হজ করা। হজের সময়কাল: শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ – এই তিন মাসকে “আশহুরে হজ” বলা হয়। হজের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী মূলত ৮ থেকে ১৩ জিলহজের মধ্যে সম্পন্ন হয়। হজের ফরয ৩টি: ১. ইহরাম – হজের নিয়ত ও তালবিয়া পাঠ করে ইহরামে প্রবেশ করা।২. আরাফার ময়দানে অবস্থান – ৯ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে কিছু সময় থাকলেই যথেষ্ট।৩. তাওয়াফে জিয়ারত – ১০ জিলহজ ঈদের দিন বা পরে কাবা শরীফ ৭ চক্কর দেয়া। এগুলোর যে কোনো একটি বাদ পড়লে হজই শুদ্ধ হবে না। হজের ওয়াজিবসমূহ: ১. সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা২. মুযদালিফায় অবস্থান করা৩. মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা (রামি জামারাত)৪. কোরবানি করা (হজে তামাত্তু ও কিরানে) কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে হজ শুদ্ধ হবে তবে দম (জবাই) দিতে হবে। হজের সুন্নতসমূহ: ১. ৮ জিলহজ মিনায় গিয়ে রাত যাপন করা২. তালবিয়া বারবার পাঠ করা৩. আরাফার খুতবা শ্রবণ করা৪. আরাফা ও মুযদালিফায় বেশি বেশি দোয়া করা৫. জামায়াতে নামাজ পড়া ও নিয়ম মেনে চলা৬. হালক করানো (সম্পূর্ণ মাথা মুন্ডানো)৭. গুনাহ থেকে বিরত থাকা, উত্তম ব্যবহার করা ইহরাম: হজের জন্য নির্ধারিত পোশাক ও নিয়ত সহকারে ‘মীকাত’ থেকে ইহরাম বাঁধা আবশ্যক।পুরুষদের জন্য ২ টুকরো কাপড়, নারীদের সাধারণ পর্দাশীল পোশাক। ইহরামের কিছু নিষেধ: চুল কাটা বা নখ কাটা সুগন্ধি ব্যবহার শিকার করা বিবাহ বা বিবাহ পড়ানো ঝগড়া, গালমন্দ সেলাই করা কাপড় পরা (পুরুষদের জন্য) হজের ধাপসমূহ: ৮ জিলহজ (ইয়াওমুত তরবিয়া): ইহরাম বেঁধে মিনায় যাওয়া মিনায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া রাত মিনায় যাপন ৯ জিলহজ (আরাফার দিন): ফজর পড়ে আরাফায় যাওয়া দুপুরে খুতবা ও নামাজ দোয়া, কান্না, ক্ষমা চাওয়া সূর্যাস্তের পর মুযদালিফায় যাওয়া মাগরিব-ইশা একত্রে আদায় রাতে মুযদালিফায় থাকা ১০ জিলহজ (ঈদের দিন): মিনা গিয়ে বড় জামারায় ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ কোরবানি মাথা মুন্ডানো বা চুল কাটা ইহরাম খোলা কাবা শরিফে গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত সাঈ করা ১১-১২ জিলহজ (তাশরীক): তিন জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ রাতে মিনায় থাকা চাইলে ১৩ তারিখেও থাকা যায়, এটি সুন্নাত। হজের গুরুত্বপূর্ণ আদব ও পরামর্শ: সবকিছু নিয়ম ও সময়মতো করা গুনাহ, ঝগড়া, অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা ধৈর্য ও সহনশীলতা বজায় রাখা কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার করা সাথীদের সহযোগিতা করা ফিকহ ও মাসআলা জানা থাকা নারীদের হজ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান: মাহরাম ছাড়া হজ করা জায়েয নয় হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ জায়েয নয়, তবে আরাফায় থাকা যাবে চেহারা ও হাত না দেখিয়ে পর্দা রক্ষা করা হজ না করার ক্ষতি: যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ করে না, তার ব্যাপারে কঠিন হাদিস এসেছে।রাসূল (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করে, সে ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করুক, তাতে কিছু আসে যায় না।”[সুনানে দারিমি: ১৭৭৪] উপসংহার: হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, গুনাহ থেকে মুক্তির এক অপূর্ব সুযোগ। হজ পালনে রয়েছে জান্নাত লাভের সুসংবাদ, আর তা যদি নিয়ম অনুযায়ী ও আন্তরিকতার সাথে পালন করা হয়— তবে হজ মানুষকে এক নবজাতকের মতো নির্মল করে দেয়। হাদিসের আলোকে হজের ১০টি বিস্ময়কর তথ্য ১. হজ গুনাহ মুছে দেয়রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীলতা ও গুনাহ থেকে দূরে থাকে, সে এমনভাবে (পাপমুক্ত) ফিরে আসে যেভাবে তার মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিল।”(সহীহ বুখারী: ১৫২১) ২. হজ জান্নাতের ওয়াদা এনে দেয়রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:“একটি মাবরূর হজের প্রতিদান শুধু জান্নাত।”(সহীহ বুখারী: ১৭৭৩, সহীহ মুসলিম) ৩. হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভরাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত:… এবং হজ করা।”(সহীহ বুখারী: ৮, সহীহ মুসলিম: ১৬) ৪. হজ সবধরনের গুনাহ মুছে দেয়রাসূল (সা.) বলেন:“উমরাহ এক উমরাহের মধ্যে যা গুনাহ হয়েছে তা মুছে দেয়। আর মাবরূর হজের প্রতিদান শুধু জান্নাত।”(সহীহ বুখারী: ১৭৭৩) ৫. হজের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ আসেহাদিসে এসেছে:“হজ ও উমরা পালনকারীরা আল্লাহর অতিথি। তারা যদি তাঁর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তিনি তা কবুল করেন।”(সুনান ইবনু মাজাহ: ২৮৯২) ৬. আরাফাতের দিনে আল্লাহ বান্দাদের গর্ব করেনরাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:“আরাফার দিনের চেয়ে আল্লাহ বান্দাদের নিয়ে গর্ব করার আর কোনো দিন নেই।”(সহীহ মুসলিম: ১৩৪৮) ৭. হজ মুসলিমদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বড় নিদর্শনমিল্লাতের বর্ণ, জাতি, গৌরবের পার্থক্য ছাড়িয়ে সবাই একই কাপড়ে, একই স্থানে, একই নিয়মে সমবেত হয়। ৮. হজ ধৈর্য, ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মহাসমররাসূল (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন:“সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে ধৈর্য সহকারে হজ পালন করা।”(আবু দাউদ) ৯. হজের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতমিনা, আরাফা, মুজদালিফা — প্রতিটি স্থান ও সময় হজের অংশ; এখানে ঘুমানো, চলাফেরা করাও ইবাদত হয়ে যায়।(সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) ১০. হাজী দোয়া করলে কবুল হয়রাসূল (সা.) বলেন:“হাজী যখন দোয়া করে তখন তার দোয়া ফেরানো হয় না।”(মুসনাদ আহমদ: ৭৪৫৩)

হজ মুসলমানদের কেবলা

হজ মুসলমানদের কেবলা : কুরআন, হাদিস ও তাৎপর্য১. কুরআনের আয়াতসমূহ:হজ ফরজ হওয়ার ঘোষণা:“এবং মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উষ্ট্রের উপর চড়ে, যা আসে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।” — সূরা হজ্জ, আয়াত ২৭কেবলা সম্পর্কে নির্দেশনা:“তোমরা যেদিক থেকেই আসো, সেই দিক থেকেই মুখ ফিরিয়ে মসজিদুল হারামের দিকে ফিরো।” — সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪৯ কা’বা আল্লাহর ঘর:“নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষদের জন্য নির্মিত হয়েছে, তা হচ্ছে বক্কায় (মক্কায়) যা বরকতময় এবং বিশ্বের জন্য পথনির্দেশ।” — সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬২. হাদীসসমূহ:হজ ইসলামের স্তম্ভ:“ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত—… হজ পালন করা এবং কা’বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা।” — সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮ হজের ফজিলত:“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে, সে গুনাহমুক্ত হয়ে ফিরে আসে যেন নবজাত শিশুর মতো।” — সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫২১৩. হজ ও কেবলার গুরুত্ব:কা’বা মুসলমানদের কেবলা—নামাজ, হজ, ও কুরবানি এই কেন্দ্র ঘিরেই আবর্তিত।হজ মুসলমানদের একতা, ভ্রাতৃত্ব ও তাওহিদের প্রকাশ—সব জাতি, বর্ণ এক জামাতের অংশ।হজে গিয়ে কেবলার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজের গুনাহর ক্ষমা চায়, আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করে।৪. গুরুত্বপূর্ণ উপসংহার:হজ ও কেবলা মুসলমানের জীবনে শুধু এক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা হলো ঈমান, তাওহিদ ও ইসলামী ঐক্যের প্রতীক। হজের মাধ্যমে মানুষ আত্মিক প্রশান্তি, গুনাহমুক্ত জীবন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।